কুল চাষ করে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুড়িয়েছেন ফুলবাড়িয়ার রুবেল

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ১৬:৫৯

মো. আ. জব্বার, ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ থেকে : উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল কুল (বরই) চাষ করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুড়িয়েছেন ফুলবাড়িয়ার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল নোমান রুবেল। আজ তিনি তরুণের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার বাগানের বাম্পার ফলন দেখে কুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অনেকে। এই তরুণ উদ্যোক্তার বাড়ি ফুলবাড়িয়া উপজেলার ১০নং কালাদহ ইউনিয়নের বিদ্যানন্দ গ্রাম। তিনি মরহুম তোফাজ্জল হোসেন এর ছেলে। ২০০৫ সালে এসএসসি পাশ করার পর লেখাপড়ায় তার মন না বসায় স্থানীয় বিদ্যানন্দ নতুন বাজারে কীটনাশকের ব্যবসা শুরু করেন।

সরেজমিনে রুবেলের কুল বরই ও পেয়ারা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় আট একর জমিতে কুল বরই ও পেয়ারা বাগান করেছেন তিনি। প্রতিটি কুল গাছ প্রায় ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা। প্রতিটি কুল গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ রঙের কুল বরইয়ের মুকুল। মুকুলে ভারে মাটিতে নুয়ে পড়েছে প্রতিটি গাছের ডাল।
কীটনাশক ব্যবসায় তেমন কোন সুবিধা না করতে পেরে ২০২১ সালে ৩ একর একর জায়গা লিজ নিয়ে বল সুন্দরী জাতের ৩০০টি চারা লাগিয়ে কুল চাষ শুরু করেন রুবেল।
ঐ বছর তার সার, কীটনাশক, বেড়া এবং শ্রমিক বাবদ আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয় এবং কুল বিক্রি করেন প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তিনি আরও তিন একর জায়গা লিজ নিয়ে মোট ৬ একর জায়গায় আগাম টক ১০০টি চারা, আগাম টক মিষ্টি জাতের ১০০টি চারা, ভারত সুন্দরী ২০০টি চারা, কাশ্মীর জাতের ২০০টি চারা লাগান ফেব্রুয়ারি মাসে। এতে ঐ বছর তার খরচ হয় ৩ প্রায় লক্ষ টাকা। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে তিনি কুল বিক্রি করেন প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে স্বপ্নবাজ এ তরুণ ঐ বাগানে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে কুল বিক্রি করেন প্রায় ১৬ লক্ষ টাকার।
২০২৪ সালে তিনি আরও ২ একর জায়গা লিজ নিয়ে বাগানে সাথী ফসল হিসেবে গোল্ডেন-৮, থাই-৩, জাতের পেয়ারা চাষ শুরু করেন। ২০২৪ সালে পেয়ারা ও কুল চাষে তিন লক্ষ টাকা খরচ হলেও বছর শেষে রুবেল পেয়ারা ও কুল বিক্রি করেন প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা। ২০২৫ সালে তিনি পেয়ারা ও কুল বাগান থেকে ২৫ লক্ষ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
তরুণ উদ্যোক্তা রুবেল জানান, ছোট বেলা থেকেই কৃষির প্রতি আলাদা ভালো লাগা ছিল। তাই লেখাপড়ায় ভাল না করতে পারায় চিন্তা করেছি কৃষি নিয়ে কিছু করা যায় কিনা। তাই এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ও পরামর্শ নিয়ে বিদেশি জাতের কুল বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই।

উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আবু রায়হান বলেন, রুবেল একজন অগ্রগামী কৃষি উদ্যোক্তা। তার বাগানের অবস্থা খুবই ভাল। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি অফিস তার কুল বরই ও পেয়ারা বাগানের খুঁজ খবর রাখেন এবং নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হয়।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর মোহাম্মদ বলেন, ফুলবাড়িয়ার রুবেল যুবক সমাজের জন্য এক অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। তাকে দেখে অনেক চাষিরা এখন কুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং বেশ লাভবান হচ্ছেন। রুবেলের মত কৃষি উদ্যোক্তাদেরকে উন্নতর প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করে তাদের অর্জিত ফল ও ফসল বিদেশে রপ্তানী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।