জনতা ডেস্ক: গত শনিবার রাতভর আফগানিস্তান সীমান্তে ব্যাপক সংঘর্ষের পর হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দেশটি জানিয়েছে, তাদের সেনাদের হামলায় আফগান তালেবানের ২০০ জনের বেশি সৈন্য ও অন্যান্য যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এছাড়া আফগানদের হামলায় নিজেদের ২৩ সৈন্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ২৫টি সীমান্তপোস্ট দখল এবং ৫৮ জন সেনাকে হত্যার দাবি করেছে আফগানিস্তান। এদিকে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করছে দেশটি। অন্যদিকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের ১৯টি আফগান পোস্ট দখল করার কথা জানিয়েছে পাক সেনাবাহিনী। আফগান সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাতভর সংঘাতের সময় এই সীমান্তপোস্টগুলো পাকিস্তানের দখলে এসেছে বলে জানিয়েছে সেনাবহিনীর একটি সূত্র।
গত শনিবার রাতে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মধ্যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল রোববার পাক সেনাবাহিনীর মিডিং উইং জানিয়েছে, আফগানিস্তান সীমান্তে রাতভর সংঘর্ষে আমাদের ২৩ সেনা নিহত ২৯ জন আহত হয়েছেন। তবে সকালে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেছিলেন, তাদের হামলায় ৫৮ পাক সেনা নিহত হয়েছেন। আর নিজেদের ৯ সেনা প্রাণ হারান বলে জানান তিনি। তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের হামলায় দুই শতাধিক আফগান যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। তারা বলেছে, বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দেখা গেছে, রাতের হামলায় তালেবান ও অন্যান্য ২০০ জনের বেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছে। এছাড়া তালেবান সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দাবি করে পাক সেনাবাহিনী বলেছে, তালেবানের অবকাঠামো, সেনা পোস্ট, ক্যাম্প, হেডকোয়ার্টার এবং সন্ত্রাসীদের সাপোর্ট নেটওয়ার্কের ক্ষয়ক্ষতি ছিল ব্যাপক। যার সবই হয়েছে সীমান্ত ও কৌশলগত অঞ্চলে। এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে চলতি সপ্তাহে কাবুলে পাকিস্তানের কথিত বিমান হামলার পর। এটি নিয়ে দুই দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়েছে। তালেবান কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তারা হেলমান্দ প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলে পাকিস্তানের অন্তত দুটি সীমান্তচৌকি দখল করেছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষও এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আফগান বাহিনীর হামলার জবাবে তারা ভারী অস্ত্রে পাল্টা গুলি চালিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে পাকিস্তানের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, শনিবার রাতে তালেবান বাহিনী একাধিক সীমান্তপয়েন্টে গুলি চালায়। আমরা চারটি স্থানে আর্টিলারি দিয়ে জবাব দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আফগান তালেবানের আগ্রাসন বরদাশত করব না। পাকিস্তানি সেনারা ভারী গোলাবর্ষণের মাধ্যমে আফগান সীমান্ত পোস্টগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর্টিলারি, ট্যাংক, হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে নিশ্চিত করেছে সামরিক সূত্র। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার আফগান রাজধানী কাবুলে দুটি ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করে বলে, এটি আফগান সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। এদিকে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করছে আফগানিস্তান। দেশটির সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ গত রোববার এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর ভারী যুদ্ধাস্ত্র ও ট্যাংক পাকিস্তান সীমান্তের দিকে গেছে। এর আগে শনিবার রাতের সংঘাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ২৫টি সীমান্তপোস্ট দখল এবং ৫৮ জন সেনাকে হত্যার দাবি করেছে আফগানিস্তান। কাবুলে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এ তথ্য জানিয়েছেন। এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, শনিবার রাতের সংঘাতে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী ২৫টি সীমান্তপোস্ট থেকে পাক সেনাদের হটিয়ে দিয়েছে আফগান সেনাবাহিনী। সংঘাতের সময় আফগান সেনাদের বন্দুক ও গোলা হামলায় এসব সীমান্ত পোস্টের কমপক্ষে ৫৮ জন সেনা নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। পাকিস্তান যদি ফের আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে, তাহলে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।