স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী কার্যক্রম জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) ও জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) বর্তমানে দেশের সিগারেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের বেপরোয়া কার্যক্রমের ফলে প্রতিবছর দেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে মারা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।
আইন অমান্য করে এই কোম্পানিগুলো তরুণ প্রজন্মকে আসক্ত করতে আগ্রাসী প্রচারণা চালাচ্ছে। দেশের ৪৫ জেলায় ৯৪৪টি স্থানে ৩২ হাজারবার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেখানে বিএটি ও জেটিআই-এর সম্পৃক্ততা সর্বাধিক।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্প্রতি ‘সব নীতিতে স্বাস্থ্য’ (Health in All Policies) অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত শক্তিশালী করার দাবি জোরদার হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কোনো অর্থনৈতিক উন্নয়নই টেকসই হবে না।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো—তামাক আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। এ সুযোগে তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে নীতি প্রণয়নে প্রভাব ফেলছে। ইনসাইট ম্যাট্রিক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি বহুজাতিক কোম্পানির হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গবেষণা প্রকাশ করে এনবিআরের কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গণমাধ্যমকে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা প্রচারে আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের গৃহীত ইতিবাচক পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করতে তামাক কোম্পানিগুলো বারবার অপপ্রচার চালাচ্ছে, অথচ তারাই প্রতিবছর নানা কৌশলে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দিচ্ছে।
অন্যদিকে, তামাক চাষের জন্য জমির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন তামাক কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়ার পরিবর্তে সরকারকে কৃষিজাত ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানিতে মনোযোগী হতে হবে।
জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সব মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা এখন সময়ের দাবি।