ত্রয়োদশ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি ছিল অনেকের, অবশেষে এই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এই ম্যাপে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমগুলো কোন সময়ের মধ্যে শেষ হবে, সেই সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকে গেছে যে, নির্বাচনের তফশিল ও ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য সময়সীমা সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি রোডম্যাপে। এমনকি সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ সম্পর্কেও কিছু বলা হয়নি। কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, ভোটগ্রহণের তারিখের ৬০ দিন আগে তফশিল ঘোষণা করা হবে, তবে তিনি নির্বাচনের তারিখ জানেন না। তিনি যোগ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা শুধু আগামী রমজানের আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বলেছেন। আগামী নির্বাচনের ঘোষিত রোডম্যাপে বিএনপি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, জামায়াতে ইসলামী পুরো সন্তুষ্ট নয় বলে জানিয়েছে আর এনসিপি বলেছে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল।
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে বর্তমানে দেশের প্রধান তিন দলের প্রতিক্রিয়ায় কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। জামায়াতে ইসলামী বলছে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সংসদ ও সরকার গঠন করতে হবে। এই প্রতিক্রিয়ায় প্রশ্ন উঠবে, তবে কি বর্তমানের ওয়েস্ট মিন্স্টার পদ্ধতিতে জামায়াত নির্বাচন করবে না? যদি তাই হয়, তাহলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হবে সংকট। অন্যদিকে এনসিপি রোডম্যাপকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল বলছে যেহেতু, তাই তাদেরও ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। দলটির বক্তব্য হলো, জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়ার আগে নির্বাচনি রোডম্যাপ মানে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ। তাই এ দলেরও ভবিষ্যৎ রাজনীতিটা দেখতে হবে আমাদের।
তবে আমরা মনে করি, প্রধান তিন দলের মতপার্থক্য সত্ত্বেও অচিরেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরি করতে দলগুলোকে সচেষ্ট হতে হবে। প্রথম কথা, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এখন জাতীয় দাবি। যে কোনো মূল্যে এই দাবি পূরণ করতে হবে। সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বের শাসন আমরা দেখিনি অনেক বছর ধরে। বর্তমান সরকার জনগণের অভিপ্রায়েই প্রতিষ্ঠিত বটে; কিন্তু এ সরকার তো নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ করতে হবে বলে মনে করি আমরা।
নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, সে বিষয়ে দুই দলের যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, এর নিরসন করা গেলে ভালো হয়। আমরা একটা বিষয় বুঝি, বড় তিন দলের যে কোনো একটি নির্বাচনে অংশ না নিলে প্রশ্ন উঠতে পারে। দেখা দিতে পারে রাজনৈতিক অস্থিরতা। আমরা একটা সুস্থির, গণতান্ত্রিক সমাজ চাই, আর এ চাওয়া মেটানোর একটা বড় উপায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।