এস.এম.নাহিদ:ফেনীর ফুলগাজী থানার মধ্যম শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের এক জেলে পরিবারে জন্ম সালামত উল্ল্যাহর। শৈশবে মাছ বিক্রেতা বাবার সংসারে টিকে থাকার লড়াইয়ে ভারত থেকে পাতার বিড়ি এনে বিক্রি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। সেই দারিদ্র্যের ভেতর থেকেই সুযোগ পেয়ে ঢুকে পড়েন সরকারি চাকরির নিরাপদ আশ্রয়ে। ভূমি অফিসে কর্মরত থেকে দুর্নীতির কারিগর হয়ে ওঠেন সালামত। বিভিন্ন জেলার ভূমি অফিসে দায়িত্ব পালনকালে জমি জালিয়াতি, ঘুষ গ্রহণ, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গোপালগঞ্জ ভূমি অফিস থেকে অবসরে যান তিনি।
নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর খিলক্ষেত নামাপাড়ায় পা রাখেন সালামত। সেসময়কার খালি জায়গায় বাঁশ-খুঁটি, মোটা কাপড় আর বস্তা দিয়ে তৈরি ঘরেই বাস করতেন এই স্বল্প আয়ের সরকারি কর্মচারী। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দৃশ্যপট বদলে যায়। একসময় যে স্থানে বস্তিঘর ছিল, সেই জায়গাতেই এখন দাঁড়িয়ে আছে ‘নাহার হাউজ’ নামের ৬তলা ভবন।স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্নীতির বীজ বপনের পর ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় সেই বীজে জলসেচ দিয়েছেন সালামত—ফলে গড়ে উঠেছে অবৈধ সম্পদের এক বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্য। জমি দখল, জাল কাগজপত্র তৈরি, দালাল চক্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানি—এসবকেই রুটিনে পরিণত করেছেন তিনি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে গোপনে চলাফেরা করছেন সালামত। শুক্রবার ২৯ আগস্ট জুম্মার নামাজের আগে খিলক্ষেতে স্থানীয় বিএনপির এক নেতার বাসা থেকে বের হতে দেখা যায় তাকে, হাতে ছিল অনেক কাগজপত্র। প্রশ্ন উঠেছে—এই বিএনপি মতাদর্শের নেতাই কি সালামতের পাওয়ার ব্যাংক? এদিকে খিলক্ষেতের নাম ‘সালামত নগরী’ করার পরিকল্পনা আরও জোরালো হচ্ছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। প্রশাসনের নীরবতা এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতির এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে খিলক্ষেত পরিণত হবে এক ভয়ঙ্কর দখলদার-রাজনীতির দুর্গে।
প্রশ্ন রয়ে যায় – এবারও কি প্রশাসন নীরব থাকবে? নাকি এবারই শেষ হবে সালামতের সালামত নগরী গড়ার অপচেষ্টা?