উত্তরায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিল প্রসাশন : দাবী ছাত্র-জনতা ও আলেমদের

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০৬:৪৮

উত্তরা থেকে কামরুজ্জামান : রাজধানীর উত্তরায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে অনুষ্ঠিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা একজনের নাম উল্লেখ করে আর‌ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা-বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করেছে পুলিশ, এমনটাই দাবি করেছে বৃহত্তর উত্তরার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আলেম সমাজ। ২৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ সোমবার উত্তরা ৭ন‍ং সেক্টর শহীদ মুগ্ধ মঞ্চে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা এ কথা জানান। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তুরাগের সাবেক মূখ্য সংগঠক সরদার রিয়াদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, গেল ২৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ শুক্রবার বাদ জুমা ইসকন কর্তৃক দেশব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ধর্ষণ ও গুম-খুনের বিরুদ্ধে এবং ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধকরণের দাবিতে সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে উত্তরা ১২ নং সেক্টর খালপাড় পুলিশ বক্স থেকে ১১নং সেক্টর চৌরাস্তা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও গণজমায়েতকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দেওয়াসহ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা একজনের নাম উল্লেখ পূর্বক আরও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে একটি মিথ্যা-বানোঢয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, উক্ত কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল দেশব্যাপী ইসকনের নামে সংঘটিত সহিংসতা উগ্রবাদী ও ধর্মীয় বিদ্বেষ মূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো এবং সরকারের নিকট সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আহ্বান জানানো। ইসকন বিরোধী ঐ কর্মসূচিটি ২৪ তারিখ দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে শুরু হয়ে বিকেল ৩ টার দিকে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। পুরো কর্মসূচি জুড়ে অংশগ্রহণকারীরা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং কোন ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য বা আচরণ বিধি লংঘন করা হয়নি। কর্মসূচিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। বক্তারা জানান, ইসকন বিরোধী ঐ কর্মসূচি শেষে উত্তরা জোনের ডিসি মহিদুল ইসলামের সাথেও তাদের আলাপ হয়। শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানটি শেষ করায় তাদের প্রশংসা করেন ডিসি মহিদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা দাবি করেন – প্রশাসনের উপস্থিতি এটি প্রমাণ করে যে, কর্মসূচিটি ছিল সম্পূর্ণ বৈধ, দায়িত্বশীল ও গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চার অংশ। এ সময় তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এক কথিত সাংবাদিক দেড় ঘন্টারও বেশি সময়ের সেই কর্মসূচির মাত্র ১৫-২০ সেকেন্ডের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভিডিও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ভিডিওটির শিরোনামে লেখা হয় ‘ছাত্রদের আগ্রাসন, উত্তরায় ধর্মীয় আন্দোলন’। ছাত্ররা বলেন, ঐ ভিডিওতে ডাহা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর শিরোনাম ব্যবহার করে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি ও সাধারণ মানুষকে ভুল তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়েছে। এটি ছিল নিন্দনীয় উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।

আর এ বিষয়টিকে পূজি করে তুরাগ থানা ডিএমপি ঢাকা একটি মামলা দায়ের করে। যাতে উল্লেখ করা হয়, উত্তরা ১২ নং সেক্টর খালপাড় পুলিশ বক্সের সামনে কতিপয় লোক একত্রে গণজমায়েত হয়ে দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিতসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করে বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে মারাত্মক ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। যা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তারা বলেন, ২৪ অক্টোবরের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ, প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষে। এতে কোনো ধরনের সহিংসতা, উস্কানি ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার মতো কোনো কর্মকাণ্ড ঘটেনি । সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৪ দফা গণ দাবি ঘোষণা করে, ছাত্র-জনতা ও আলেম সমাজ। এর মধ্যে –
১. শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে পতিত ফ্যাসিবাদী কায়দায় প্রশাসন কর্তৃক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে আখ্যা দেওয়ার ঘটনাকে তদন্ত করে প্রশাসনের থাকা ইসকনপন্থী দালালদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে অপসারন করতে হবে।
২. তুরাগ থানায় দায়েরকৃত উক্ত মিথ্যা-বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা নিঃশর্তে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের ভূয়া, বিভ্রান্তিকর ও ধর্মীয় বিভাজন উস্কে দেওয়ার জন্য করা অপ-প্রচারণা তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এবং
৪. ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার হয়রানি বা ভীতিপ্রদর্শনের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
এছাড়াও উক্ত দাবীসমূহ আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বাস্তিবায়ন করতে হবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনকারিরা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো সত্য অনুসন্ধান করলে খুব সহজেই প্রমাণিত হবে যে উত্তরার সাধারণ ছাত্রজনতা আইন মেনে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মত প্রকাশ করেছেন, যা বাংলাদেশের সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত একটি মৌলিক অধিকার।