ভারতের হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তের মুখে আলেমদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার — নাগরিক সমাজের উদ্বিগ্ন আলেম-ওলামাদের ক্ষোভ

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ১১:০৬

স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন ও বহির্বিশ্বের নানামুখী চক্রান্তের প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা ও বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা যখন হুমকির মুখে, তখন দেশীয় আলেম-ওলামাদের ‘জঙ্গি’ তকমা দিয়ে কোণঠাসা করার উদ্দেশ্যে বাংলা আউটলুক ও সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের প্রকাশিত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদনের প্রতিবাদে

বৃহস্পতিবার ২৩ অক্টোবর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

“বাংলা আউটলুকের বানোয়াট রিপোর্ট—অভিযোগ অস্বীকার ও তৎক্ষণাত ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি” শিরোনামে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এটি কেবল সাংবাদিকতার অপব্যবহার নয়; বরং দেশ, ইসলাম ও সমাজের শান্তিপ্রিয় আলেমদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত একটি অপপ্রচার।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নাগরিক সমাজের উদ্বিগ্ন আলেম-ওলামাবৃন্দ। এতে বক্তব্য রাখেন দাওয়াতুল ইসলাম বাংলাদেশের আমীর মুফতি মাহমুদুল হাসান গুনবি এবং ইসলামি শিক্ষা কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত মুহাম্মাদ আবু সাঈদসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলা আউটলুক সম্প্রতি একটি মিথ্যা, মনগড়া ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে একটি ফেসবুক আইডির কর্মকাণ্ডকে বিকৃতভাবে মুফতি মাহমুদুল হাসান গুনবি, মুহাম্মাদ আবু সাঈদসহ কয়েকজন আলেমের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে—যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম দায়িত্বহীনতা ও সাংবাদিকতার ন্যূনতম নীতি লঙ্ঘনের উদাহরণ।

মুহাম্মাদ আবু সাঈদ তার বক্তব্যে জানান, “আমি হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করার পর ঢাকায় একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করি, যেখানে সাধারণ শিক্ষিত মানুষ কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে। আমাদের সব কার্যক্রম প্রকাশ্যে পরিচালিত হয়, তবু কিছু ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী আমাদের টার্গেট করেছে।”

তিনি অভিযোগ করেন যে, কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষী মহল দেশের আলেম সমাজকে সন্দেহের চোখে দেখছে এবং তাদের কার্যক্রমকে বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করছে।

মুফতি মাহমুদুল হাসান গুনবি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে দাওয়াহ কার্যক্রমের মাধ্যমে ইসলামের শান্তিপূর্ণ প্রচারে আমি কাজ করছি। কিন্তু ইসলামবিরোধী শক্তি আমাদেরকে জঙ্গি বা উগ্রবাদী হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছে। এটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।”

লিখিত প্রতিবেদনে চারটি উদ্বেগজনক দিক তুলে ধরেন বক্তারা:

1. মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তি
প্রতিবেদনটিতে ‘অনুসন্ধানে প্রাপ্ত’ ধরনের শব্দ ব্যবহার করে কোনো প্রমাণ ছাড়াই আলেমদের নাম যুক্ত করা হয়েছে, যা অতীতে বহু নিরপরাধ আলেমকে হয়রানি করার কৌশল ছিল।

2. বিদেশি সম্পৃক্ততার মিথ্যা অভিযোগ:
প্রতিবেদনে বিদেশ ভ্রমণ ও অজ্ঞাত সংযোগের অভিযোগ আনা হলেও একটিও যাচাইযোগ্য প্রমাণ দেওয়া হয়নি।

3. অবাধ অনুমানভিত্তিক অপপ্রচার:
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “উদঘাটন সম্ভব না হলেও মিস্টার ওয়াই কুরআন শেখানোর আড়ালে কাজ করছে” — এই ধরনের অভিযোগ একেবারেই অনুমাননির্ভর ও অগ্রহণযোগ্য।

4. অযৌক্তিক যুক্তি প্রয়োগ:
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একজন লিবারেল অপরাধী, তাই আরেকজন লিবারেলও অপরাধী’—এই হাস্যকর যুক্তি সাংবাদিকতার নীতি ও যুক্তিবিজ্ঞানের পরিপন্থী।

দাবিনামা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বাংলা আউটলুক ও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের প্রতি নিম্নলিখিত দাবি জানান:

উক্ত মিথ্যা প্রতিবেদন অবিলম্বে তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক;

প্রতিবেদনের জন্য প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা হোক;

ভবিষ্যতে এমন ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য প্রকাশ না করার নিশ্চয়তা প্রদান করা হোক।

বক্তারা সতর্ক করে বলেন, “যদি বাংলা আউটলুক উক্ত প্রতিবেদন প্রত্যাহার ও ক্ষমাপ্রার্থনা না করে, আমরা মানহানি ও ক্ষতিপূরণসহ সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।”

দেশের অখণ্ডতা ও ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বক্তারা আরও বলেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও কিছু দেশি দালাল চক্র বাংলাদেশের অখণ্ডতা নষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ সময় আলেম-ওলামাদের ভয় দেখিয়ে ও ‘চক্রের সদস্য’ বানিয়ে দাওয়াহ কার্যক্রম বন্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে।

তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান—দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় এ ধরনের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বক্তারা দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় আলেম সমাজই দেশের ঐক্য ও স্থিতিশীলতার মেরুদণ্ড। ইসলামের প্রচারকে অপরাধ হিসেবে চিত্রিত করা জাতির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।”