এস.এম.নাহিদ : মাত্র ৩’শ টাকার বৈদ্যুতিক তার চুরির সন্দেহে রংমিস্ত্রি ও যুবদল কর্মী মো. শুভ (২৭) কে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে একদল সন্ত্রাসী। হত্যার পর মরদেহ বস্তাবন্দি করে রেললাইনে ফেলার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা দেখে ফেলায় খুনিরা মরদেহ খা-পাড়া সিকদার স্কুলের সামনে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়। ৯৯৯ কল পেয়ে খিলক্ষেত থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে প্রেরণ করে। ১৪ই অক্টোবর মঙ্গলবার খিলক্ষেত মধ্যপাড়া আলী মাতবর রোডের (খ-১)নং বাসার নীচে এই নির্মম হত্যাকান্ডের সূচনা হয়। ১৫ই অক্টোবর (বুধবার) খিলক্ষেত থানায় স্থানীয় মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে মাহফুজুর আলম তমালকে প্রধান আসামি করে মোট ৮ জন ও অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধিতে মামলা (নং-১৫) দায়ের করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে মামলার প্রধান ও ১নং আসামি তমালের বাসার বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়-যার আনুমানিক বাজারমূল্য মাত্র তিন শত টাকা।এই তুচ্ছ ঘটনাকেই কেন্দ্র করে শুরু হয় এক রোমহর্ষক নির্মম অধ্যায়।ঘটনার দিন মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) মাগরিবের পর আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে অজ্ঞাত এক ফোন কলের মাধ্যমে রংমিস্ত্রি ও যুবদল কর্মী মো. শুভ (২৭)-কে ডেকে নেওয়া হয় মধ্যপাড়া খ/১নং তমালের বাসায়। শুভ প্রবেশ করার পরপরই বাইরে থেকে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানেই শুরু হয় তার ওপর অমানবিক নির্যাতনের প্রথম ধাপ, যা চলে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী।পরে শুভকে নিয়ে যাওয়া হয় মামলার ৫নং আসামি জাফর উল্লাহর স্ত্রী তাসলিমা বেগমের মুরগির দোকানে। সেখানে শুভ’র মুখে একাধিকবার ঢালা হয় গরম পানি।তবুও ক্ষান্ত হয়নি নরপিশাচরা।রাত আনুমানিক ৮টা ২০ মিনিটে শুভকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় জাফর উল্লাহর ভাঙারির দোকানের ভিতরে।সেখানে চলে শেষ ও ভয়ংকরতম নির্যাতনের পর্ব। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অবিরাম নির্যাতনের পর শুভকে চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দেয় ঘাতকেরা।এমনকি হত্যার পর মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে বস্তাবন্দি করে পার্শ্ববর্তী রেললাইনে ফেলে দিতে যায় তারা। জনতার সাড়া টের পেয়ে হত্যাকারীরা মরদেহভর্তি বস্তাটি সিকদার স্কুলের সামনে ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায়।
শুভ হত্যার বিষয়ে মামলার বাদী ও নিহতের মা পারুল বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন-
অজ্ঞাত ফোন কল দিয়ে আমার ছেলেকে তমালের বাড়িতে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।পরে তাসলিমার মুরগির দোকানে নিয়ে নির্যাতন করে খুনীরা।সেখান থেকে খাপাড়া সিকদার স্কুলের সামনে মামলার ৩নং আসামী জাফর উল্লাহর ভাঙ্গারির দোকানে শুভকে নিয়ে যায়। আমার ছেলে চুরির ঘটনা স্বীকার না করায় বিবাদীরা সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জন তাদের হাতে থাকা লোহার রড,কাঠের ডাসা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথাড়ি ভাবে আঘাত করে শুভকে। এমনকি আমার ছেলের দুই পায়ের হাটুর নিচে,হাটুতে, পায়ের তলা, দুই উরুতে, কপালের বাম পাশে, বাম চোখ ও বাম কানের মাঝখানেও গুরুতর জখম করে। খুনীরা পরস্পর যোগসাজশে রাত ১০.৩০মি.পর্যন্ত ৩নং বিবানী জাফর উল্লাহ’র ভাঙ্গারির দোকানে আটকে রেখে পর্যায়ক্রমে আঘাত করতে করতে আমার ছেলের হত্যা নিশ্চিত করে।
উল্লেখিত বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। শুভ হত্যাকাণ্ডের এজাহারভুক্ত মামলার প্রধান ও ১নং আসামি তমাল সহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ইতিমধ্যে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে খিলক্ষেত থানা পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে।তিনি আরও জানান, মামলার আসামিরা হলেন-১) মাহফুজুর আলম ওরফে তমাল,২) মো. মামুন ওরফে কাপাসিয়া মামুন,৩) মো. জাফর উল্লাহ,৪) তানজিরুল ইসলাম,৫) তাসলিমা আক্তার,৬) মো. সোহেল,৭) মো. মেহেদী হাসান,৮) মো. সাইফুল ইসলাম। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জন রয়েছে।
সর্বোপরি পারুল বেগমের সংসার আজ ধ্বংস করা হয়েছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে শুভকে হত্যা করা হলো নৃশংসভাবে। মা বাকরুদ্ধ, স্ত্রী হামিদা হাহাকার করছে, শিশু পিতৃহীন! এ ঘটনা শুধুই একটি পরিবারকে নয়-এটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতার নগ্ন প্রমাণ। যেখানে নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, দায়িত্ব- আজ সবই শূন্য..!