রানা মিয়া : রংপুর জেলার অন্যতম ব্যস্ততম কেন্দ্র কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ড—এক কথায় পুরো উপজেলার মূল ফলক। এখানেই মিলেছে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—কাউনিয়া থানা রোড, টেপা মধুপুর ভায়ারহাট রোড, তিস্তা–লালমনিরহাট মহাসড়ক, রংপুর ঢাকা মহাসড়ক, কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কাউনিয়া রেলওয়ে স্টেশন রোড,কাউনিয়া পীরগাছা রোড। পাশাপাশি রয়েছে কাউনিয়া উপজেলা পরিষদ কার্যালয়। প্রতিদিন এই সড়কগুলো দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও শত শত যানবাহন চলাচল করে। তবুও এখানে নেই একটি ফুটওভার ব্রিজ, যা জননিরাপত্তার জন্য এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই এলাকায় চলছে এক ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা। বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ভ্যান, রিকশা আর পথচারীদের চাপের কারণে এখানে তৈরি হয়েছে এক চলন্ত মৃত্যুফাঁদ। ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতা, যথাযথ পারাপার ব্যবস্থা না থাকা এবং প্রশাসনের উদাসীনতায় প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল, গার্লস স্কুল, বাজার এলাকা ও উপজেলা পরিষদের আশেপাশে শিক্ষার্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয়। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, “প্রতিদিন সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগে। এখানে যানবাহন থামে না, একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটে।”
এলাকার বাসিন্দা শেখ এনামুল হক দুলাল বলেন, “এখানে সারাদিন ট্রাক, বাস আর অটোরিকশা মিলে এমনভাবে চলে যে, পথচারীদের দাঁড়ানোর জায়গাও থাকে না। ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় প্রতিদিন মানুষ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়।”
কাউনিয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে এই স্থানটির পাশে থানা, উপজেলা পরিষদ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে,রেলওয়ে স্টেশন রোড, থাকায় এখান দিয়ে সব শ্রেণির মানুষের যাতায়াত। সকাল-বিকেল অফিসগামী কর্মচারী, স্কুল–কলেজের ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, এমনকি দূরপাল্লার যাত্রী—সবাই এই সংযোগস্থল ব্যবহার করে। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েই চলছে।
স্থানীয় দোকানি শফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা দেখি। কখনো মোটরসাইকেল, কখনো রিকশা উল্টে মানুষ আহত হয়। ফুটওভার ব্রিজ হলে সবাই নিরাপদে চলতে পারবে।”
স্থানীয় নাবিল বাসকাউন্টার মালিক, আব্দুস সালাম বলেন, “আমাদের কাউন্টারে প্রতিদিন শত শত যাত্রী আসে। কিন্তু রাস্তা পার হতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। যদি ফুটওভার ব্রিজ থাকত, যাত্রীদের জন্য অনেক স্বস্তি আসত।”
একজন স্থানীয় ট্রাফিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,“এলাকাটিতে যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। প্রতিদিন আমরা দুর্ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি, কিন্তু রাস্তার অবস্থা ও মানুষের ভিড়ের কারণে ঝুঁকি থেকেই যায়। এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।”
সাধারণ পথচারী মোছা. রহিমা বেগম বলেন,“বাচ্চা নিয়ে রাস্তা পার হতে ভয় লাগে। গাড়ির গতি এত বেশি যে থামতেও চায় না। ফুটওভার ব্রিজ হলে অন্তত নির্ভয়ে চলতে পারতাম।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ড কেবল একটি যানবাহন থামানোর স্থান নয়—এটি পুরো উপজেলার অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রবেশদ্বার। এখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা গেলে শুধু দুর্ঘটনা কমবে না, বরং ট্রাফিক চাপও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এলাকাবাসী বলছেন, “এখন সময় হয়েছে প্রশাসন জনগণের কণ্ঠ শুনে দ্রুত উদ্যোগ নিক। কারণ প্রতিটি বিলম্ব মানে আরও একটি প্রাণহানি।”