আইন সংশোধনে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ: আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ৬, ২০২৫, ১৭:৪৪

স্টাফ রিপোর্টার :সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগে তামাক কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে রাজধানীতে জনস্বাস্থ্য সংগঠনগুলোর মানববন্ধন ও ভ্রাম্যমান ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা বলেছেন, আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানিকে ‘অংশীজন’ হিসেবে গণ্য করা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর আর্টিকেল ৫.৩ এর সরাসরি লঙ্ঘন।

সোমবার (৬ অক্টোবর ২০২৫) বিকেল ৩টায় রাজধানীতে “আইন নিয়ে তামাক কোম্পানির সাথে কোনো আলোচনা নয়” প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল এডভোকেডস (BTCA) ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (BATA)-এর যৌথ উদ্যোগে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন BTCA, BATA, এইড ফাউন্ডেশন, ডাস্, নাটাব, মানস, টিসিআরসি, নারী মৈত্রী, আইডাব্লিউবি, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।

বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সরকারের জনস্বাস্থ্য রক্ষার উদ্যোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা নিজেদের স্টেকহোল্ডার দাবি করে আইন সংশোধনে মতামত দিতে চাইছে— যা আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন। বক্তাদের মতে, সরকারের লক্ষ্য যেখানে জনস্বাস্থ্য রক্ষা, সেখানে তামাক কোম্পানির লক্ষ্য মুনাফা অর্জন। তাই নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তাদের মতামত গ্রহণ অযৌক্তিক ও বেআইনি।

বক্তারা আরও বলেন, অতীতেও যখনই তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তখনই তামাক কোম্পানিগুলো বিভ্রান্তি ছড়ানোর এবং নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। এ ধরনের তৎপরতা এফসিটিসি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষে ভ্রাম্যমান ক্যাম্পেইনটি জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে যাত্রা শুরু করে জাতীয় সংসদ ভবন, এনবিআর, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও প্রেসক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সংগঠনগুলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়— তামাক কোম্পানির প্রভাব প্রতিহত করে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে।

বক্তারা উল্লেখ করেন, সম্প্রতি সরকারের ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। “সব নীতিতে স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য” (Health in All Policies) বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্তভাবে আইন সংশোধন এখন সময়ের দাবি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ রোধ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম পূর্বশর্ত।