# সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে ৩৭ দেশের ২০১ অভিযাত্রীকে বন্দি করেছে ইসরায়েল
# গাজামুখী জাহাজ থেকে আটক কর্মীদের ইসরায়েলে নিয়ে গেছে কমান্ডোরা
# অবরোধ ভাঙার চেষ্টায় ছুটছে ৪ জাহাজ, ফিলিস্তিনের জলসীমায় পৌঁছেছে দুটি
# গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সমালোচনা করলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী
# ইসরায়েলকে এখনই থামাতে হবে: মালেশিয়া প্রধানমন্ত্রী
# সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরাইলি বাধার প্রতিবাদে ফুঁসছে উঠেছে গোটা বিশ্ব
# সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হানা, অভিযোগ যাচ্ছে আন্তর্জাতিক আদালতে
জনতা ডেস্ক: গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বহরে থাকা একটি বাদে সব জাহাজ আটক করেছে ইসরায়েল। গতকাল বৃহস্পতিবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে আল জাজিরা। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে ৩৭ দেশের ২০১ সেচ্ছাসেবককে বন্দি করেছে ইসরায়েল। সংগঠনটির মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় জানিয়েছেন, সমুদ্রে ১৩টি নৌযান আটক করা হয়েছে। জাহাজ থেকে আটক সেচ্ছাসেবকদের ইসরায়েলে নিয়ে গেছে কমান্ডোরা। তবে গাজায় অবরোধ ভাঙার চেষ্টায় ছুটছে ৪টি জাহাজ, ফিলিস্তিনের জলসীমায় পৌঁছেছে দুটি জাহাজ। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সমালোচনা করলেন ইতালি ও মালেশিয়া প্রধানমন্ত্রী। সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরাইলি বাধা ও হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসছে উঠেছে গোটা বিশ্ব। গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বহরে ইসরায়েলি বাহিনীর লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) পাঠানো হবে বলে জানা গেছ।
জানা গেছে, গাজায় চলমান অবরোধ ও গণহত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী মানবিক উদ্যোগ থেকে যাত্রা শুরু এক সংগঠনের। চিকিৎসক, আইনজীবী, শিল্পী, ধর্মীয় নেতা ও নাবিকসহ ৪০টিরও বেশি দেশের সাধারণ মানুষ এই উদ্যোগে যুক্ত হন। এ মিশনের নামই ‘গ্লোবাল সমুদ ফ্লোটিলা বা জিএসএফ’। সংগঠকরা জানান, এটি গাজার অবৈধ অবরোধ ভাঙতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসামরিক নৌ-মিশন। কোনো রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এই উদ্যোগ। লক্ষ্য একটাই গাজার জন্য মানবিক করিডোর খুলে দেওয়া। সংগঠনের ওয়েবসাইটে আগেই জানানো হয়েছিল, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর থেকে ছোট-বড় নৌযান গাজামুখী যাত্রা করবে। এতে অংশ নেবেন গ্লোবাল মার্চ টু গাজা, সুমুদ কনভয়, সুমুদ নুসান্তারা ও ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের কর্মীরা। সংগঠকরা বলেন, ‘আমাদের একটাই অঙ্গীকার ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও মানবজীবনের মর্যাদা।’ তারা আরও জানান, এই অভিযানের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ ও আন্তর্জাতিক সংহতিকে নতুন মাত্রায় নেওয়া হবে। সুমুদ ফ্লোটিলার সঙ্গে যুক্ত অধিকারকর্মীরা জানান, মানবিক এই নৌ-মিশনের লক্ষ্য বিশ্বজনমতকে গাজার পাশে দাঁড় করানো এবং ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা।
এক্স-পোস্টে ইসরায়েলি প্রররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কোনো জাহাজ ‘সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ বা আইনি নৌ-অবরোধ ভাঙার চেষ্টায় সফল হয়নি। সব যাত্রী নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তারা নিরাপদে ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছেন, যেখান থেকে তাদের ইউরোপে নির্বাসিত করা হবে। এতে বলা হয়, একটি জাহাজ রয়ে গেছে। যদি এটি কাছে আসে, তবে এটিকেও প্রতিরোধ করা হবে। গত মধ্যরাতে ইসরায়েলি নৌ-কমান্ডোরা গ্লোবাল ফ্লোটিলার ৪৪টি জাহাজের মধ্যে প্রায় ৪০টিতে উঠে পড়ে। তারা জিপিএস সিগন্যাল বন্ধ করে দিয়ে জাহাজে থাকা শত শত কর্মীকে আটক করে। রয়টার্সের যাচাই করা ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিওতে গ্রেটাকে সৈন্য-বেষ্টিত একটি ডেকের ওপর বসে থাকতে দেখা গেছে। আটক যাত্রীদের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলাও রয়েছেন।
গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজ বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে ৩৭ দেশের ২০১ সেচ্ছাসেবককে বন্দি করেছে ইসরায়েল। সংগঠনটির মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় জানিয়েছেন, সমুদ্রে ১৩টি নৌযান আটক করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা অবরোধ ভাঙতে যাত্রা করা ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র নৌবহরের ওপর হামলা চালিয়ে অন্তত ১৩টি নৌকা আটক করেছে ইসরাইলি বাহিনী। আটক হওয়া যাত্রীদের মধ্যে কেবল স্পেন থেকেই ছিলেন ৩০ জন। এছাড়া আটককৃতদের মধ্যে ইতালি থেকে ২২ জন, তুরস্ক থেকে ২১ জন এবং মালয়েশিয়া থেকে ১২ জন রয়েছেন। আটক ও নৌযান ঘেরাও-এর পরও তাদের মিশন থেমে নেই। এখনো প্রায় ৩০টি জাহাজ গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফ্লোটিলার পথরোধের প্রতিবাদে ইতালিতে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দেশটির বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠন।
গাজামুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজ থেকে আটক কর্মীদের ইসরায়েলে নিয়ে গেছে দেশটির কমান্ডোরা। আটক কর্মীদের মধ্যে সুইডিশ পরিবেশবাদী আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংস্থাটির দাবি, আটক সবাই ‘নিরাপদ ও সুস্থ আছেন’। তাদের ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের ইউরোপে পাঠাতে ‘ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া’ শুরু করা হবে। খবরে বলা হয়েছে, গত রাত থেকে ইসরায়েলি নৌ কমান্ডোরা ফ্লোটিলার অন্তত ৪৪টির মধ্যে ২১টি নৌযান আটক করেছে। এসব নৌযানে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা চলছিল, যা অবরোধ ভাঙার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ।
জানা গেছে, ইসরায়েলের বাধা পেরিয়ে গাজার জলসীমায় ঢুকে পড়েছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি জাহাজ। পথে রয়েছে আরও ২৩টি। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, মিকেনো নামে ওই জাহাজ বর্তমানে গাজার জলসীমায় অবস্থান করছে। তবে সেটি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে পড়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। আল জাজিরা জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক কর্মী-সামাজিক আন্দোলনকারীকে বন্দি করেছে ইসরায়েল। গাজার অবরোধ ভেঙে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে যাওয়া এই বহরে ৪০টিরও বেশি জাহাজ ছিল। এর আগে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার জাহাজগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়, জলকামান ছুড়ে আক্রমণ চালায় এবং আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে কর্মীদের আটক করে।
তবে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলছে, এই বাধা তাদের মিশন থামাতে পারবে না। ইসরায়েলকে ফাঁকি দিয়ে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সুমুদ ফ্লোটিলার অন্তত ৩০ জাহাজ। গাজা উপকূল থেকে আর মাত্র ৮৫ কিমি দূরে রয়েছে তারা। সংগঠনটির ভাষ্যমতে, অবৈধভাবে চালানো ইসরায়েলি বাধা সত্ত্বেও তারা গাজার অবরোধ ভাঙতে এবং একটি মানবিক করিডোর খুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাদের দাবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য এই নৌবহর খাদ্য ও মানবিক সহায়তা বহন করছে। সুমুদ ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় জানিয়েছেন, গাজামুখী সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে ৩৭ দেশের দুই শতাধিক কর্মীকে বন্দি করেছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, আটক নৌযানগুলোতে ৩৭ দেশের ২০১ জন কর্মী ছিলেন। এর মধ্যে স্পেন থেকে ৩০ জন, ইতালি থেকে ২২ জন, তুরস্ক থেকে ২১ জন এবং মালয়েশিয়া থেকে ১২ জন অংশ নেন।
বাংলাদেশের শহিদুল আলম ছাড়াও সুমুদ ফ্লোটিলায় রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রুহি আক্তারও। শহিদুল আলম ‘কনশায়েন্স’ নামে একটি বড় জাহাজে রয়েছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেটি আটক হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ফ্লোটিলার অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী গ্রেটা থানবার্গকেও গ্রেফতার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েল বলছে, গাজাগামী এই নৌযানগুলো ‘আইনসম্মত নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে।’ তবে আন্তর্জাতিক আইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অধিকার রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নিরাপত্তার জন্য ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে যাত্রাপথ সরাসরি ভিডিও সম্প্রচারও করা হচ্ছে।
এদিকে গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বহরে থাকা ৪৪টি জাহাজের মধ্যে মাত্র চারটি জাহাজ এখনো গাজার দিকে ছুটে চলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার লাইভ প্রতিবেদনে আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের জলসীমায় প্রবেশকারী নৌবহরের প্রথম জাহাজ ‘মাইকেনো’ এবং ‘ম্যারিনেট’ এখনো যাত্রা করছে। এছাড়া ‘সামারটাইম-জং’ এবং ‘শিরিন’ নামের দুটি জাহাজ এখনো চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দুটি জাহাজ আইনজীবীদের বহনকারী। গত মধ্যরাতে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থামিয়ে গ্রেটা থানবার্গসহ আটক করা শত শত কর্মীকে ইসরায়েলে নেওয়া হচ্ছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি নৌ-কমান্ডোরা গ্লোবাল ফ্লোটিলার ৪৪টি জাহাজের মধ্যে প্রায় ৪০টিতে উঠে পড়ে। তারা জিপিএস সিগন্যাল বন্ধ করে দিয়ে জাহাজে থাকা শত শত কর্মীকে আটক করে।
রয়টার্সের যাচাই করা ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিওতে গ্রেটাকে সৈন্য-বেষ্টিত একটি ডেকের ওপর বসে থাকতে দেখা গেছে। আটক যাত্রীদের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলাও রয়েছেন। গাজামুখী নৌবহরটিতে ইসরায়েলি এমন হামলায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এটিকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়েছে তুরস্ক। একই সঙ্গে এ ঘটনায় স্পেন, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক ও গ্রিসসহ বহু দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
অপরদিকে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ত্রাণবাহী নৌবহর হামলা ও আটকের ঘটনায় কড়া বার্তা দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ইসরায়েলকে এখনই থামাতে হবে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, গাজা-মুখী নৌবহরে থাকা ২৩ জন মালয়েশিয়ানকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছে। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, তাদের মুক্তি নিশ্চিত করতে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের—যেমন তুরস্ক, মিশর এবং কাতারের—সহায়তা চাইবেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি আবারও বলছি ইসরায়েলের এ অন্যায় শাসন ব্যবস্থা এখনই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। যেখানে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, সেখানে মালয়েশিয়া চুপ থাকবে না।
এছাড়াও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আবারও গাজায় সহায়তা পাঠানোর প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছেন। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বহর থেকে ২২ জন ইতালীয় নাগরিককে আটক করেছে ইসরায়েল। ডেনমার্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা কেবো যাতে তারা দ্রুত ইতালিতে ফিরতে পারে। তবে আমি এখনও বিশ্বাস করি, এসব উদ্যোগ ফিলিস্তিনি জনগণের কোনো উপকারে আসে না। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তায়ানি সংসদে জানিয়েছেন, আটককৃত ২২ জন ইতালীয় নাগরিক সুস্থ আছেন। তিনি বলেন, আমি স্বস্তি পাচ্ছি যে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে নিয়ম মেনে চলা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতা বা জটিলতা ঘটেনি। তাছাড়া নৌবহর আটকের ঘটনায় ইতালিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শ্রমিক ইউনিয়নগুলো সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
এদিকে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে সবশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। গত বুধবার দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বার্তা দেন তিনি। শহিদুল আলম জানান, আমরা এখন ওসেনে আছি। এইমাত্র সংবাদ আসলো যে আলমার ওপর আক্রমণ হয়েছে। কিছুক্ষণ পরে সেখান থেকে সিগনালে আসা বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমরা সবাই একসাথে জড়ো হয়েছি। আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন জায়গায় আমরা রিপোর্ট দিতে চেষ্টা করছি। আলমা সবার প্রথমে ছিল। আমাদের জাহাজ সবচেয়ে বড় এবং নৌবহরের শেষের দিকে আছে। কাজেই আলমার সাথে যা হচ্ছে, সেটা আমাদের ওপর হবে সেটা অনুমান করা যায়। সে কারণে এটা আমাদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। অনেক দেশের মানুষ রয়েছে যে যার মতো তাদের নিজ দেশে জানানোর চেষ্টা করছে। এর ২ ঘণ্টা পর আরেক ভিডিও বার্তায় বলেন, আজ সন্ধ্যায় সমুদ্র উত্তপ্ত হয়ে যায়, বজ্রপাত শুরু হয়। এই উত্তপ্ত সাগরের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব চেষ্টা করছে এগিয়ে যেতে। আমরা সবচেয়ে পেছনে আছি। আমাদের ওপর কী আসবে সেটা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল চেষ্টা করছে অন্যদের ওপর আক্রমণ করে আমাদেরকে সাবধান করার। তারা আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। আমরা সবাই এই ঝড়ের মধ্যে বাইরে এসে একসাথে তাদের সাথে সহমর্মিতা জানাচ্ছি। আপনারাও যে তাদের সাথে আছেন, আমাদের সাথে আছেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, সেটা আমাদের জানাবেন। আমরা তাদেরকে তা পৌঁছে দেব।
এছাড়াও গাজার জনগণের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মানবাধিকারকর্মী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রুহি লোরেন আখতার অংশ নিয়েছেন। তার সংস্থাটির পূর্ণ নাম ‘রিফিউজি বিরিয়ানি অ্যান্ড ব্যানানাস’ (আরবিবি)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ মানবাধিকারকর্মী বর্তমানে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একজন সহযাত্রী। এই যাত্রা নিয়ে তিনি ভিডিও পোস্ট করেছেন যেখানে তাদের অবস্থান ও গাজা নিয়ে বার্তা দিয়েছেন। গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রুহি লোরেন লেখেন, গাজাবাসীর জন্য ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-র অন্যান্য নৌযানের ঠিক পেছনে ‘সামারটাইম জং’ নামের একটি জাহাজে তিনি অবস্থান করছেন। তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞা এবং আশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। নৌবহরের এই দলটি মানবিক সহায়তা নিয়ে ইসরায়েলি বাধা উপেক্ষা করে গাজায় পৌঁছানোর শেষ চেষ্টা করছে।’
বর্তমানে তার সংস্থাটির কার্যক্রম গাজা ও গ্রিসে চালু রয়েছে। বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর পাশে থাকার অঙ্গীকারের স্বীকৃতিস্বরূপ রুহি ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের নর্থ ইস্ট বাংলাদেশি অ্যাওয়ার্ডসে ‘পার্সন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন।বাংলাদেশ ভ্রমণ
গাজামুখী সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরাইলি বাহিনী হানা দেয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে বিশ্বজুড়ে। জাহাজগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। ছুড়েছে জলকামান, আটক করেছে কর্মীদের। ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দার ঝড় তোলে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশর সব স্তরের মানুষ। ফ্লোটিলায় হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে, তুরস্ক, ইতালি, স্পেন, জার্মানির বার্লিন, গ্রিস এবং আর্জেন্টিনায়। ফ্লোটিলায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে ফ্যাসিবাদী ও সামরিকতাবাদী নীতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা আটক হওয়া তুর্কি নাগরিকদের মুক্তির দাবিতে আইনি পদক্ষেপ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানী আঙ্কারার ইসরাইলি দূতাবাসের বাইরেও। বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, আমাদের সমর্থন অবশ্যই ফ্লোটিলার পক্ষে। সারা বিশ্ব থেকে জাহাজ যাচ্ছে। ইসরাইলের এমন হীন কাজের জবাব দেয়ার জন্য আমাদের সরকারকে অনুরোধ করছি। গাজার জন্য ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক মানবিক নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ আটকে দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে ইতালির সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ জানিয়ে ইতালির সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ইতালির বিভিন্ন শহরে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলো হয়েছে রাজধানী রোম এবং মিলানে। ফ্লোটিলায় আটকে দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ গ্রিসে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে বিক্ষোভে জড়ো হয়েছেন সাধারণ নাগরিকরা। ইউরোপে ছাড়িয়ে লাতিন দেশ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা আটক হওয়া কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন। ইসরাইলের হাতে আটক হওয়া জাহাজগুলোর একটিতে রয়েছেন আর্জেন্টাইন আইনপ্রণেতা সেলেস্ট ফিয়েরো। তিনি বলেন, আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি, ফ্লোটিলায় যেন ইসরাইলি সেনারা না ঢোকে। ওখানে আমাদের নেতাদের আটক করা হয়েছে। বিশ্ববাসীর প্রতি দাবি, আওয়াজ তুলুন। এটা একটা সন্ত্রাসী হামলা। এর প্রতিবাদ করুন। তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে গাজার প্রতি সমর্থন এবং ফ্লোটিলা আটকে দেয়ার প্রতিবাদে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। এসময় ইসরাইলবিরোধী নানা শ্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
তবে গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বহরে ইসরায়েলি বাহিনীর লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) পাঠানো হবে। ত্রাণ বহরের সঙ্গে থাকা আইনজীবীদের বরাতে ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত একটি জাহাজে থাকা আল জাজিরার হাসান মাসুদ গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, নৌবহরে থাকা আইনজীবীরা ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মানবিক ও সামুদ্রিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করছেন। ইসরায়েলি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো আইসিজেতে পাঠানো হবে। হাসান মাসুদ বলেন, আমরা সমস্ত ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা নিশ্চিত করতে পারি, বেশ কয়েকটি নৌকা এখনো গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এমনকি যদি কেবল একটি নৌকা গাজায় পৌঁছায়, তবুও এটি অবরোধ ভাঙার লক্ষ্য অর্জন করবে। তিনি আরও জানান, ইতালির সিসিলি থেকে রওনা হওয়ার পর আরেকটি নৌবহর এখন গাজার দিকে যাত্রা করছে। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, কর্মীরা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
উল্লেখ্য, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এই বহরে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। গাজার অবরোধ ভেঙে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে যাওয়া এই বহরে ৪০টিরও বেশি জাহাজ রয়েছে। এর আগে গাজার চলমান মানবিক সংকট নিরসনে একাধিকবার সাগরপথে সাহায্য পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার কারণে তা বহুবার বাধার মুখে পড়ে। তবুও মানবিক সহায়তার কাফেলা থেমে নেই।