তামাক চাষে হুমকির মুখে মাছ ও খাদ্য নিরাপত্তা

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৫:২৫

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য তামাক চাষ ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, তামাক চাষ বাড়তে থাকলে মাছসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদ বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, উবিনিগ, তাবিনাজ ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া) চূড়ান্ত করা জরুরি” শীর্ষক ভার্চুয়াল টকশোতে বক্তারা এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানটি ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য।

হালদায় মাছের প্রজননে মারাত্মক প্রভাব

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, হালদা নদীর অববাহিকায় শত শত একর জমিতে তামাক চাষের কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র ব্যাহত হচ্ছে। তামাক চাষে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হচ্ছে এবং গাছের উচ্ছিষ্টাংশ নদীতে গিয়ে দূষণ সৃষ্টি করছে। অথচ এলাকাটি মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণার পরও তামাক চাষ বন্ধ হয়নি, যা সরকারের নীতিগত বৈপরীত্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জমির উর্বরতা নষ্ট করছে তামাক

উন্নয়ন পরামর্শক নাসির উদ্দীন শেখ বলেন, তামাক চাষের জমিতে প্রয়োজনীয় পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গ বসতে না পারায় জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটের ঝুঁকি বাড়ছে। তিনি তামাক পাতার রপ্তানিতে মওকুফকৃত ২৫ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহালের দাবি জানান।

কৃষকদের ফাঁদে ফেলছে কোম্পানিগুলো

ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান বলেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের প্রলুব্ধ করছে। তিনি জানান, একক ফসল হিসেবে আয়-ব্যয়ের দিক থেকে ১৪টি ফসলের মধ্যে ১২তম অবস্থানে রয়েছে তামাক। অর্থাৎ লাভজনক বলার প্রচার একটি মিথ্যা ধারণা।

সরকারি পর্যায়ে অসহযোগিতা

নীতি বিশ্লেষক ও আইনজীবী মাহবুবুল আলম অভিযোগ করেন, কৃষি অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে তামাক কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তারা তামাক চাষ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে তামাকের পরিবর্তে মসলা চাষ বাড়ানো গেলে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতো।

কৃষকদের অর্থনৈতিক ক্ষতি

উবিনিগের পরিচালক সীমা দাস সীমু বলেন, তামাক চাষীরা চড়া সুদে বীজ-সার সংগ্রহ করে এবং পাতার গ্রেড নির্ধারণের সময় কোম্পানি নানা অজুহাতে কম দাম দেয়। এতে কৃষক ঋণের ফাঁদ থেকে বের হতে পারে না। তিনি সংরক্ষিত বনভূমিতে তামাক চাষ বন্ধের দাবি জানান।

নীতিমালা চূড়ান্তের আহ্বান

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, রপ্তানি শুল্ক ছাড়ের ফলে মাত্র এক বছরে ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বেড়েছে। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকেও তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার আহ্বান জানান এবং তামাক চাষের জমিতে দ্বিগুণ ভূমি কর আরোপের দাবি করেন।

বিশেষজ্ঞরা একমত হয়ে বলেন, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করা না হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ মারাত্মক সংকটের মুখে পড়বে।