মাখদুম সামি কল্লোল: রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেশের ব্যাংক ও বীমা খাত অভূতপূর্ব লুটপাট ও সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ব্যাংক-বীমা পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি এম ওয়াহিদ মজুমদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকারপৃষ্ঠপোষকতায় এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী ব্যাংক-বীমা খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এতে দেশের আর্থিক খাত ভয়াবহ সংকটে পড়েছে।
প্রধান অতিথি ড. আব্দুল মঈন খান বলেন,
“গণতন্ত্রহীনতা ও জবাবদিহির অভাবের কারণেই আজ ব্যাংক ও বীমা খাত ধ্বংসের মুখে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা।”
লুটপাটের চিত্র (বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য)
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্যমতে, ভুয়া ঋণ ও ব্যাংক লুটের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে প্রায় ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় একাই ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়।
সালমান এফ রহমান নামে-বেনামে প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে এবং ৭ হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া।
দ্যা ডেইলি স্টারের তথ্যমতে, লুটপাট ও খেলাপি ঋণের কারণে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।
সিপিডি ও মানবজমিনের হিসাব অনুযায়ী, শুধুমাত্র ব্যাংক খাত থেকেই ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম মাসুদ একাই প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা লুট করেছেন।
হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ অন্তত ২৪টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার হয়েছে।
পিকে হালদারের নেতৃত্বে কয়েকটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা লোপাট করা হয়।
বক্তারা জানান, আওয়ামী লীগ শাসনামলেই মোট ৮২টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ৬০টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় ৯টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার ফলে আর্থিক খাত আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
২০২০ সালে পরিবহন মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় বাধ্যতামূলক মোটর ইন্স্যুরেন্স বাতিল করায় রাষ্ট্র প্রতি বছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, ব্যাংক-বীমা খাতের পুনরুজ্জীবনের জন্য একটি নীতিনিষ্ঠ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। এই আলোচনা সভার মাধ্যমে জনগণের সামনে ব্যাংক-বীমা খাতের ভয়াবহ দুর্নীতি ও সংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।